চাণক্য বলেছেন, “ শ্মশান ও সেবা-শুশ্রূষা কেন্দ্রে গেলে মানুষের মনে যে ভাব আসে, সেই ভাব যদি সবসময় সমভাবে বজায় থাকে, তাহলে মানুষ পাপ কাজে জড়িত হতে পারে না “। মৃত্যুকে অনুধাবনই আমাদের কামনা-বাসনাগ্রস্থ মনকে নির্মল করে তোলে। মৃত্যুই প্রতিক্ষণে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, এখনই সময় জীবনকে উপভোগের, এখনই সময় জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করার। মৃত্যুই মনে করিয়ে দেয়, পারলে শুধু আজকে বাঁচো, আজ ছাড়া আর কিছুই নেই তোমার। কারণ জীবনের অস্তিত্ব, জীবনের অনুভব না আছে অতীতে না আছে ভবিষ্যতে। জীবনকে অনুভব করা যায় কেবলমাত্র এই ক্ষণে । আর যারা প্রতিক্ষণে মৃত্যুকে অনুভব করতে পারে, তারাই কেবল প্রতিক্ষণে জীবনকে উপভোগ করতে পারে। তাই পৃথিবীর বেশিরভাগ সফল ব্যক্তিই তাদের দিন শুরু করে, আজকের দিনকে জীবনের শেষ দিন চিন্তা করে।
আমরা পৃথিবীতে অনন্ত সময়ের জন্য আসি না, খুবই ক্ষুদ্র সময়ের পরিব্যাপ্তি নিয়ে আমাদের এই জীবন। হঠাৎ হয়তো কোন এক সময় মৃত্যু জীবনের দরজায় কড়া নাড়বে আর তখনই আমাদের এই গতিময় জীবনের ইতি টানতে হবে। আমরা সবাই জানি মৃত্যুই জীবনের চূড়ান্ত ঠিকানা। কিন্তু আমরা এমনভাবে জীবনযাপন করি যেন ভাবটা এমন, সবাই একদিন মারা যাবে ঠিক আছে, কিন্তু আমি কখনো মারা যাবো না, অন্ততকাল বেঁচে রইবো পৃথিবীর সবকিছু গো-গ্রাসে ভোগ করার জন্য।
মৃত্যুকে আসলে তারাই জীবনের নির্মম পরিণতি ভাবে, যারা জীবনকে উপভোগ করতে জানে না, জানে শুধু ভোগ করতে। তাদের মধ্যে নেই ভোগ আর উপভোগের মধ্যকার সূক্ষ্ম পার্থক্য অনুধাবনের ক্ষমতা। আর যাদের মধ্যে উপভোগের ক্ষমতা নেই, দিন শেষে অতৃপ্তিই তাদের সাথী।
তাই তো রবি ঠাকুর তাঁর গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থে মৃত্যুকেই জীবনের শেষ পরিপূর্ণতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। “ ওগো আমার এই জীবনের শেষ পরিপূর্ণতা মরণ, আমার মরণ, তুমি কও আমারে কথা। “
অপূর্ব পাল ১৪ ই আগস্ট, ২০২১।
Comments