বডিল্যান্ডের আকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা! কে B - লিম্ফোসাইটকে আশা দেবে, কে দেবে ভরসা! এই চিন্তায় বডিল্যান্ড যখন তোলপাড়, তখন স্বস্তির বৃষ্টি হিসেবে বডিল্যান্ডের আকাশ ফুড়ে আবির্ভূত হয় বিভীষণ হিসেবে খ্যাত “ভ্যাকসিন “।
বডিল্যান্ডের সেনাপতি সেই মহান যোদ্ধা B - লিম্ফোসাইটের কেন আজ এই দশা? যে লিম্ফোসাইট কত রথী - মহারথী শত্রুকেও তার সেই বিখ্যাত অস্ত্র “ অ্যান্টিবডি “ দিয়ে নিমেষেই যুদ্ধে পরাজিত করেছেন।কিন্তু সেই B - লিম্ফোসাইটই আজ “করোনা ভাইরাস “ নামক শক্তিশালী মায়াবী শত্রুর নিকট অসহায়। বিখ্যাত বই “ দি আর্ট অব ওয়ার “ এর লেখক মহামতি সানজু বলেছেন, “ যে শত্রুকে জানে না এবং নিজেকে জানে না, সে কখনোই যুদ্ধে জয়ী হতে পারে না।“ আর করোনা ভাইরাস রাবনের মতো এতোটাই মায়াবী যে কিছু সময় পর পর নিজের রূপ বদলাতে সক্ষম। তাই B - লিম্ফোসাইট করোনা ভাইরাসকে চিনে উঠতেই পারছে না। আর সেইজন্যই বডিল্যান্ড করোনা ভাইরাসের নিকট ধরাশয়ী।
বিখ্যাত যোদ্ধা সানজু‘র আরেকটি বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে, “ সকল যুদ্ধই ছলনা নির্ভর।“ বডিল্যান্ডকে করোনার হাত থেকে রক্ষার্থে অবশেষে তারা এই রণকৌশলই গ্রহণ করেন। আর এই রণকৌশলের ফল হিসেবেই বডিল্যান্ডে কোভিড ভ্যাকসিনের আবির্ভাব ঘটে।
কিন্তু ভ্যাকসিনকে বিভীষণের সঙ্গে কেন তুলনা করা হয়? চলুন দেখা যাক। বিভীষণ যেমন রাবনের সহোদর ছিলেন ঠিক তেমনি ভ্যাকসিনও কিন্তু ভাইরাসের সহোদর।বুঝলেন না তো? আসলে ভ্যাকসিন হচ্ছে বডিল্যান্ড যে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত, ঠিক সেই ভাইরাসেরই একটা অংশ।এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ভ্যাকসিন যদি ভাইরাসেরই সহোদর হয়, তাহলে সেও তো বডিল্যান্ডে রোগ সৃষ্টি করবে, কিন্তু রোগ প্রতিরোধ করবে কীভাবে? যেকোন জীবানু অর্থাৎ বডিল্যান্ডের বহিরাগত শত্রু, হোক সে ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া ।তার দুইটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে - ১. বডিল্যান্ডে রোগ সৃষ্টি করে ২. বডিল্যান্ডের ওই একই রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য অস্ত্র হিসেবে অ্যান্টিবডি তৈরি করে।আর ভ্যাকসিন তৈরি সময় জীবাণুর রোগ সৃষ্টির ক্ষমতাটিকে নষ্ট করে দেওয়া হয়।কিন্তু অন্য বৈশিষ্ট্যটিকে ঠিক রাখা হয়। সুতরাং সহজভাবে বললে, রোগ সৃষ্টির ক্ষমতাহীন জীবাণুকেই ভ্যাকসিন বলা হয়। এখন যদি আমরা আবার বিভীষণের সঙ্গে তুলনায় ফিরে যায়, তাহলে দেখতে পাবো - বিভীষণ রাবনের সহোদর হলেও রামের কল্যাণে রাবনের বিরুদ্ধেই কিন্তু কাজ করে গেছে, ঠিক তেমনি ভ্যাকসিন ভাইরাসের সহোদর হলেও বডিল্যান্ডের কল্যাণে ভাইরাসের বিরুদ্ধেই কাজ করে।
কিন্তু ভ্যাকসিন বডিল্যান্ডে কীভাবে শত্রু মোকাবিলায় কাজ করে? সে ব্যাপারে আলোকপাত করা যাক।ভ্যাকসিন বডিল্যান্ডে প্রবেশের পর পরই বডিল্যান্ডের ভেঙে পড়া প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিছুটা নড়েচড়ে বসে। যদিও প্রথম দিকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অনেকেই ভ্যাকসিনকে নিজেদের শত্রু হিসেবেই চিহ্নিত করে, তবে কিছুদিন পরে তারা বুঝতে পারে ভ্যাকসিন তাদের শত্রু নয় পরম বন্ধু।
ভ্যাকসিন বডিল্যান্ডে প্রবেশের পর প্রচুর সংখ্যায় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সম্মুখ সারির যোদ্ধা (B - লিম্ফোসাইট, T - লিম্ফোসাইট) তৈরি হয় এবং সাথে সাথে প্রচুর সংখ্যায় অ্যান্টিবডিও তৈরি হয়।ফলে ভাইরাসের সাথে যুদ্ধে B -লিম্ফোসাইট খুব সহজেই ভাইরাসকে পরাজিত করতে পারে। এছাড়া ভ্যাকসিন সক্রিয় অনাক্রমীকরণের মাধ্যমে সম্মুখ সারির যোদ্ধা অর্থাৎ B -লিম্ফোসাইট এবং T -লিম্ফোসাইট এর মধ্যে ইমিউনলজিক্যাল মেমোরি সৃষ্টি করে, যাতে ভবিষ্যতে বহুবছর পরে করোনা ভাইরাস আক্রমণ করলেও তারা তাদের সহজেই চিনতে পারবে।এতে দ্রুত তাদের মোকাবিলা করতেও সক্ষম হবে।
আর এভাবেই ভ্যাকসিনের কল্যাণে বডিল্যান্ড থেকে করোনা ভাইরাস বিতাড়িত হয় এবং ভবিষ্যতে বডিল্যান্ড যেন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে নিজেদের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখতে পারে, সেইজন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও শক্তিশালী করে তোলে।
অপূর্ব পাল
২৬ ই জুলাই, ২০২১।
Comments